চুনারুঘাটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ,কুদ্দুস মিয়া মাস্টার আদালতে আত্মসমর্পণ,জামিন নামঞ্জুর
চুনারুঘাট,(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা ও মামলা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় জমির আইল বা সীমানা নিয়ে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুনারুঘাট থানায় দায়ের করা মামলা নং-৩০, তাং-০৯.০৭.২০২২ খ্রিঃ, ধারাঃ ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ পেনাল কোড অনুযায়ী তদন্ত চলছে। মামলার একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে ভয়াবহ হামলার চিত্র, যেখানে স্থানীয় শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও তাদের স্বজনদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। সাক্ষ্য অনুযায়ী, কুদ্দুস মিয়া মাস্টারের পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই শুরু হয় বিরোধের সূত্রপাত। আইলের মাটি কেটে দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে বাকবিতণ্ডা, পরে তা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এক পর্যায়ে কুদ্দুস মিয়ার ভাই কবির মিয়া ও চাচাতো ভাই ছইদ আলীর বিরুদ্ধে ধারালো অস্ত্র ও কোদাল দিয়ে হামলার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, ওই সময় হামলাকারীরা খুন করার হুমকিও দিয়েছিল। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সৈয়দ আকির মিয়া বলেন, “আমরা দূর থেকে এগিয়ে আসতে দেখেই ছইদ আলী কোদাল নিয়ে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। কবির মিয়াও ডেগার হাতে হামলার প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি প্রাণঘাতী হামলায় রূপ নিতে পারত, তবে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন।”পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধানের জন্য ভুক্তভোগীরা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তাতেও মীমাংসা হয়নি। বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। মামলার অন্যতম আসামি, চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি ও বর্তমান ৬ নং সদর ইউনিয়নের চুরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ কুদ্দুস মিয়া মাস্টার সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পর তিনি জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে, মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে কুদ্দুস মিয়ার আপন চাচা, ৬ নং সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ রইছ উল্লাহ মেম্বারসহ একাধিক আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে কুদ্দুস মিয়া মাস্টার ও তার পরিবার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর হামলা, সাধারণ মানুষের জমি দখল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন তাদের নিয়মিত কার্যকলাপে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় নারী ও শিশুদেরও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন। এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্য, বর্তমান মামলার ঘটনায় জনগণ আরও একবার প্রমাণ পেল যে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আদালতে কুদ্দুস মিয়া মাস্টারের আত্মসমর্পণ ও জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে সাধারণ মানুষ ইতিবাচকভাবে দেখছে। তারা আশা করছেন, পলাতক আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। চুনারুঘাট থানার এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা মামলার সব দিক খতিয়ে দেখছি। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”এঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন, যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে এবং প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
Leave a Reply