খোয়াই নদীতে বিষ মিশাচ্ছে চুনারুঘাট পৌরসভা! বেলি সেতুর ভাঙা রেলিং যেন দুর্ঘটনার ফাঁদ
মোঃ মাসুদ আলম,চুনারুঘাট,(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত বেলি সেতুর একটি রেলিং ভেঙে পরিকল্পিতভাবে নদীকে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজের আগ মুহূর্তে চুনারুঘাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা সরাসরি এই ভাঙা রেলিং দিয়ে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ চরম আকার ধারণ করছে, অন্যদিকে তিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ ঝুঁকির কারণ। নদী দূষণের নীরব ঘাতক স্থানীয়দের অভিযোগ, এক সময় বেলি সেতুর দু’পাশে বড় বড় ময়লার স্তূপ তৈরি করা হতো। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে এবং উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাইনবোর্ড টানানোর পর সেই কার্যকলাপ বন্ধ হয়। কিন্তু এখন ময়লা ফেলার নতুন কৌশল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নদীকেই। রাতের আঁধারে বা ভোরবেলা ময়লার ট্রাক এসে সরাসরি নদীতে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে। এর জন্য সেতুর একটি নির্দিষ্ট অংশের রেলিং ভেঙে ফেলা হয়েছে, যাতে সহজেই ময়লা নিচে ফেলা যায়। খোয়াই নদী শুধু একটি প্রাকৃতিক জলধারা নয়, এটি বহু মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। নদীর পাড়ে বসবাসকারী শত শত মানুষ গোসল করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গৃহস্থালি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করেন। এমনকি খরার সময় যখন অন্য কোনো পানির উৎস থাকে না, তখন অনেক পরিবার এই নদীর পানি পানীয় হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নদীতে পৌরসভার ময়লা ফেলার কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। স্থানীয় একজন ভুক্তভোগী আক্ষেপ করে বলেন, “পৌরসভার এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে আমাদের পুরো এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। নদী দূষণের পাশাপাশি বায়ু দূষণও হচ্ছে। আমরা চাই এর একটি স্থায়ী সমাধান হোক।”লাখো মানুষের জীবন ঝুঁকিতে এই বেলি সেতুটি চুনারুঘাট ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই পাড়ের বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী এবং প্রায় তিন লক্ষ মানুষ প্রতিদিন এই সেতু ব্যবহার করে যাতায়াত করে। সেতুর রেলিং ভাঙা থাকায় যেকোনো সময় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে পারে। একইভাবে পথচারীরা, বিশেষ করে শিশুরা অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এটি শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি মারাত্মক জননিরাপত্তা সমস্যা। প্রশাসনের ভূমিকা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, “আমাদের কাছে এই বিষয়টি নজরে এসেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমরা এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আগামীকাল আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব এবং যারা এই কাজের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”প্রশাসনের এই আশ্বাসে স্থানীয়রা কিছুটা স্বস্তি পেলেও, তাদের দাবি, কেবল পরিদর্শন নয়, দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তারা আশা করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে ভাঙা রেলিং মেরামত করবে এবং নদী দূষণ বন্ধে একটি টেকসই সমাধান বের করবে, যাতে খোয়াই নদী তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে এবং মানুষের জীবন নিরাপদ হয়।
Leave a Reply